পবিত্র কুরআন বিশ্বকে শান্তির দিকে আহ্বান করে। এর শিক্ষা, শান্তি ও সৌহার্দ্যরে শিক্ষা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক নুর এবং উজ্জ্বল কিতাবও। এর মাধ্যমে আল্লাহ সেসব লোককে শান্তির পথে পরিচালিত করেন, যারা তার সন্তুষ্টির পথে চলে। আর তিনি নিজ আদেশে তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং সরল সুদৃঢ় পথে তাদের পরিচালিত করেন’ (সূরা মায়িদা, আয়াত: ১৫-১৬)।
পবিত্র কুরআন মজিদ শান্তির বীজ হিসাবে আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বে পূর্ণ ইমান আনাকে উপস্থাপন করেছে। এর স্পষ্ট প্রমাণ হলো-যারা আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বে জীবন্ত ইমান রাখে তারা কখনো অস্থিরতা, অস্বস্তি বা মানসিক চাপের ততটুকু শিকার হয় না যাতে; নিজের জীবন সম্পর্কেই নিরাশ হয়ে যেতে হয়। আমরা দেখি, সেসব মনোনীত ব্যক্তি, যাদের আল্লাহতায়ালা নিজে বেছে নিয়ে নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত করে তাদের হৃদয়ে এমন শান্তি ও প্রশান্তি ভরে দেন যে, পার্থিব জগতের শত বিরোধিতা এবং বিপদাপদের ঝড়-তুফান সত্ত্বেও তারা সর্বদা আল্লাহতায়ালার আঁচলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে শান্তি ও নিরাপত্তার জান্নাতে জীবন কাটান। পৃথিবীর ইতিহাসে একজন নবি (আ.)ও এমন অতিবাহিত হননি যিনি পরিস্থিতির শিকার বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বা তার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। যেহেতু তাদের হৃদয় সর্বদা স্থায়ী শান্তি ও স্বস্তির আবাসস্থল হয়ে থাকে, তাই তাদের হৃদয়কে আল্লাহতায়ালা সর্বদা আলোকিত রাখেন। প্রত্যেক উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সময় রহিম ও করিম আল্লাহর রহমতের ছায়া তাদের মাথার ওপর বিরাজ করে এবং সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতাবলে তাদের তত্ত্বাবধান করেন।
পবিত্র কুরআন মাজিদ এ মৌলিক বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করেছে, ‘হৃদয়ে প্রকৃত ও সত্যিকারের শান্তি ও স্বস্তি আল্লাহতায়ালার স্মরণেই পাওয়া সম্ভব’ (সূরা রাদ : আয়াত ২৮)। আর আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করার সম্পদ আল্লাহতায়ালার সত্তায় পূর্ণ ইমান রাখার ফলেই পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে, হৃদয়ে যদি আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে এবং দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে এটিই সেই ব্যবস্থাপত্র যা বিশ্ব শান্তির নিশ্চিত ও সত্যিকার মাধ্যম। সমাজে বসবাসকারী সব সদস্যের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা এবং শান্তি ও নিরাপত্তার আচরণ অবলম্বন করার বিষয়ে মহানবি (সা.) ইসলামি শিক্ষামালার সারাংশ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে-ই, যার কথা এবং হাত থেকে কোনো মানুষ কোনোরূপ কষ্ট বা ক্ষতির সম্মুখীন হয় না’ (সুনানে নিসাই, কিতাবুল ইমান)।
এ ভাষ্যে মুসলমান, অমুসলমান, বর্ণ ও জাত বা পূর্বসূরির সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো তারতম্য করা হয়নি। এ সুপ্রতিষ্ঠিত ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমাজ উন্নতি করে জাতীয় শান্তি ও নিরাপত্তার জামিনদার হয়ে যায় এবং অবশেষে যদি বিশ্বের সব রাষ্ট্র নিজ নিজ স্বার্থের। ঊর্ধ্বে গিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এসব মূলনীতিতে সংঘবদ্ধ হয়ে যায় এবং কুরআনি শিক্ষামালাকে পথ নির্দেশক বানিয়ে এসব মূলনীতি বাস্তাবায়ন করে তাহলে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলা যায়, বিশ্ব শান্তি পুরো বিশ্বের ভাগ্যে অবশ্যই জুটবে।