Sourav Ganguly’s Birthday: মহারাজদার জন্মদিনটা আমাদের সকলের কাছেই একটা পার্বণ। এবারও দাদার ভক্তরা দু-দিন আগে কলকাতায় চলে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন সেলিব্রেট করতে।
তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত একজন চেন্নাই থেকে এসেছেন। তিনি বসকে বলেছিলেন, আমি দাদার গ্রুপে যুক্ত হয়েছি। তাঁর জন্মদিনে কলকাতায় যেতে চাই। অফিসের থেকে ছুটি পেয়েই চেন্নাই থেকে কলকাতায় এসেছেন ওই ভক্ত।
দাদার সঙ্গে যখন প্রথম সাক্ষাৎ তখন আমি বেশ ছোট। তখন আমার বয়স বছর ১৩-১৪ হবে। ডোনাদির কাছে নাচ শিখতাম। তখন দাদা ইন্ডিয়া খেলেন। বেশ ভয় লাগতো কথা বলতে। সময়ের সঙ্গে মহারাজদা যে কখন আমার নিজের দাদা হয়ে উঠলেন টেরই পেলাম না। তাঁর অফিসে কাজের সুযোগ পেয়েছি। আইডলকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
মহারাজদার সঙ্গে কাটানো সবচেয়ে স্মরণীয় দিন ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর। ডোনাদির বাড়ির ব্যাঙ্কোয়েটেই হয়েছিল আমার বিয়ের অনুষ্ঠান। দাদা খুব এক্সাইটেড ছিলেন। গায়ে হলুদের সময় এসেছিলেন। দুপুরে যখন ব্রাইডাল মেক-আপ হচ্ছিল, বিকেল তিনটে নাগাদ এসে ডোনাদিকে নিয়ে দাদা ঠিক করছিলেন কোন জায়গা কীভাবে সাজানো হবে, কোথায় কোন চেয়ার থাকবে, এমন সব খুঁটিনাটি বিষয়।
বিয়ের লগ্ন ছিল রাতের দিকে, সাড়ে ১০টা নাগাদ। অতিথিরা প্রীতিভোজ সারছিলেন। দাদা কিন্তু বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান পুরো শেষ হওয়া অবধি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আমার পাশে। আমার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সে কারণেই নিজের দাদার অনুভূতিটা বোধ করি সর্বক্ষণ। সবকিছু মেটার পর অনেক রাতে বাকি সকলের সঙ্গে খেতে বসেছিলেন।
আমাদের আপদে-বিপদে বড় ভরসার নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আমার স্বামীর দু-বার কোভিড হয়েছিল। আমি আইসোলেশনে ছিলাম। দাদা নিজে হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে আমাদের অফিসের সকলের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বন্দোবস্ত করেন। আমার স্বামীর শ্বাসকষ্টের কথা শুনেই ফোনে বলেছিলেন, মায়ের জন্য একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। আরেকটা একস্ট্রা রয়েছে। ওটা নিতে পারিস।
যদিও পরে আমার স্বামী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সেই অক্সিজেনের সিলিন্ডারটা লাগেনি। দাদার অফিসে কাজের সুযোগ পাওয়ার ঘটনাটাও মনে রাখার মতো। আমি ডোনাদির কাছে নাচ শেখার পাশাপাশি কিছু অফিসিয়াল কাজকর্ম করতাম। নাচের ক্লাসের পর, কিংবা ছুটির দিন। দাদা সেটা ফলো করতেন। তিনি আমার মধ্যে সিরিয়াসনেস লক্ষ্য করেছিলেন বোধ হয়।
যখন কলেজে পড়ি একদিন মহারাজদা বললেন, আমার অফিসে কাজ করবি? তাহলে কয়েকজনকে নিয়ে বাড়িতে একটা অফিস খুলব। নাচের ক্লাস বা অনুষ্ঠান থাকতো। তারই ফাঁকে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য হলেও অফিসে গিয়ে কাজ করতাম, কাজ শিখতাম। আমরা যাঁরা দাদার সঙ্গে কাজ করি তাঁদের সব সুবিধা-অসুবিধার খবর রাখেন। বাড়ির সদস্য, পরিবার-পরিজনরা যাতে ভালো থাকেন সেই খোঁজখবর রাখেন।
প্রথমবার বিদেশ সফরের কথা মনে আছে। ডোনাদির পুরো ডান্স ট্রুপের একটি অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের চিনে যেতে হতো। সকলেই পাসপোর্ট, কারেন্সির নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। দাদা সেই সময় আমাকে গাইড করেছিলেন। তিনি নিজে কারেন্সির বন্দোবস্ত করেছিলেন আমার জন্য। আরও কিছু অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে সেটা চিনে পৌঁছে সেখানকার মুদ্রায় পরিণত করিয়ে নিতে।
দাদার যে গুণটা আমাদের অফিসের সকলকেই আকৃষ্ট করে তা হলো কখনও হাল না ছাড়া। যেটা করার সেটা করেই ছাড়বেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করাটাও অন্যতম দিক। দাদা আমাদের অফিসের সকলকে সমানভাবে ভালোবাসেন। দাদার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষায় কোনও ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যেতে সুবিধা হয়। আইডলকেই তো সকলে ফলো করতে চায়।
আমি দাদার নানা শ্যুটিংয়ের সময় হাজির থাকি। ধরা যাক, ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার শ্যুটিং। অনেক পরিচালক, প্রযোজক পারফেকশনিস্ট, তাঁরা ১০-২০টা শট নেওয়ান। ফলে এমনও হয় নির্ধারিত সময় পেরিয়ে রাত ১টা, ২টো বেজে গেল। আমি গিয়ে প্রযোজক, পরিচালকদের অনেক সময়ই বলি, এবার কিন্তু লাস্ট শট। আমরা অনেক সময়ই ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলি।
কিন্তু দাদা কিন্তু একেবারেই ধৈর্য্য হারান না। বরং আমাদের থামিয়েই তিনি প্রযোজক, পরিচালকদের বলেন, আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যতক্ষণ প্রয়োজন, শ্যুটিংয়ের কাজ চালাতে পারেন। এই হলেন আমাদের আইডল, আমাদের দাদা। যাঁকে দেখে আমাদের কাজের প্রতি উৎসাহও অনেকটাই বেড়ে যায়।
মনে থাকবে গতবার দাদার জন্মদিনের কথা। ৫০ বছরের জন্মদিনে আমাদের অফিসের সকলকে দাদা লন্ডবে নিয়ে গিয়েছিলেন। দাদার এখনকার বাড়ি থেকে কাকার বাড়ি ঘণ্টা দুয়েকের পথ। সেখানে ডিনার সেরে ৭ জুলাই রাতে আমাদের ড্রপ করতে যাচ্ছিলেন দাদা। তাঁর বাড়ির কাছে এসে বললেন, ভিতরে যেতে। কিন্তু আমরা বললাম, টায়ার্ড, হোটেলেই যাই। দাদাই ছেড়ে দিয়ে গেলেন।
আমাদের অন্য প্ল্যান ছিল। অফিসের সহকর্মীরা দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেলাম। কয়েকজন কেক আনতে গেলাম। কয়েকজন কাছের পার্কে ভায়োলিন বাজানো বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের ডাকতে গেলেন। সেই ভায়োলিন বাদককে নিয়ে আমরা দাদার বাড়িতে পৌঁছে গেলাম রাত পৌনে ১২টা নাগাদ। দাদাকে চমক দিতে চেয়েছিলাম। মধ্যরাত পেরিয়ে হয়েছিল উদযাপন।
এবারও দাদার বাড়িতে যাব। অফিসেও হবে দাদার জন্মদিন উদযাপন। দাদার বহু ভক্ত তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে আসবেন। দাদাকে জানাই জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা। আমার দাদা, আমাদের দাদা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
(ছবি- তানিয়া ভট্টাচার্যের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম)